ইউএনবিকে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের সাথে (ছয়টি অভিন্ন নদী) পানিবণ্টনে কোনো বাধা দেখছি না। আমি মনে করি আমরা খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারি। এখানে মূল বিষয় হলো হালনাগাদ তথ্য নিয়ে আসা।’
হাইকমিশনার বলেন, পানি সবার জন্য একটি সংবেদনশীল বিষয় এবং সকলেরই পানির প্রয়োজন। উভয় পক্ষই তথ্য সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তাই, আমাদের এবং আপনাদের পক্ষের নিশ্চিত হওয়া উচিত যে তথ্যে দুই পক্ষই একমত হয়েছে কি না।’
বাংলাদেশকে ভারত সর্বোচ্চ স্তরের গুরুত্ব দেয়: হাইকমিশনার দোরাইস্বামী
দোরাইস্বামী বলেন, কারিগরি কমিটি পর্যায়ের বৈঠকটি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং এরপর উভয় দেশ একসাথে পানি ভাগাভাগির একটি বিস্তৃত কাঠামো তৈরি করতে পারে।
কারিগরি কমিটির বৈঠকের পর পানি সম্পদ সচিবরা আগামী বছরের মধ্যে এটিকে চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবে এবং এই উদ্দেশ্য নিয়ে একটি বৈঠক করবে যাতে তারা দেখাতে পারে যে অংশীদারিত্ব ভাগাভাগি চেতনা খুব দৃঢ় রয়েছে।
করোনা মহামারিতে সুযোগ থাকলে ২০২১ সালে যৌথ নদী কমিশনের সভা করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা পানি ভাগ করে নেব। আমরা বন্ধু, আমরা প্রতিবেশী। আমি মনে করি এটি খুব দ্রুত অগ্রসর হবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনামহামারিতে পরিস্থিতি বুঝে আমরা দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক বিষয়ে পুরোপুরি সমর্থন করছি।’
এর আগে, ১৭ ডিসেম্বরের ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই পক্ষের ২০১১ সালের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সইয়ের ওপর জোর দেন।
শিল্পকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: দোরাইস্বামী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের আন্তরিক প্রতিশ্রুতি এবং তার সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
দুই নেতা মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার এ ছয় অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কাঠামো দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ সময় সেচের কাজে কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারের জন্য রহিমপুর খালের খনন কাজ যেন সীমান্ত সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শেষ করতে দেয়, সে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে প্রস্তাবিত এমওইউ দ্রুত সই এর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে ভারতীয় পক্ষ, যা করা হলে দুই পক্ষই কুশিয়ারা থেকে তুলে নেয়া পানির পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে পারবে।
দুই নেতা যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ইতিবাচক অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং দ্রুতই সচিব পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের কথা বলেন।
সীমান্ত ব্যবস্থাপনা
সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, মানুষের জীবন খুবই মূল্যবান এবং কাউকে আঘাত বা হত্যা করা উচিত নয়, তবে সমস্যাটি হলো সীমান্তের উভয় প্রান্তেই এটি ঘটছে।
তিনি বলেন, রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে ৯০ শতাংশ ঘটনা ঘটে এবং সীমান্ত বাহিনীর উদ্দেশ্য মানুষকে আঘাত করা নয়।
হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা একমত যে উভয় প্রান্তেই কোনো প্রাণ হারাতে হবে না।
বিজয় দিবসের ভোরে বাংলাদেশির প্রাণ গেল বিএসএফের গুলিতে
দোরাইস্বামী বলেন, দু’দেশের সীমান্তবাহিনী বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে উভয় পক্ষ সীমান্তে আরও বেশি সমন্বিত টহলে ভূমিকা পালন করতে পারে।
‘আমাদের নাগরিক প্রশাসনকেও জড়িত করা দরকার এবং উভয় পক্ষের সীমান্ত এলাকার লোকদের বোঝানো যে সীমান্ত পেরোবেন না, বেড়া কাটবেন না, এটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এটিও সমন্বিত পদ্ধতিতে করা যেতে পারে,’ বলেন তিনি।
হাইকমিশনার সীমান্ত হাটের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘এটি মানুষকে বৈধভাবে কাজ করতে উত্সাহিত করবে। ‘আসুন আমরা প্রচলিত যে বাস্তুতন্ত্র রয়েছে যাকে স্বীকৃতি দিতে পারি। এটি একটি মানবিক সমস্যা। এটি আইন-শৃঙ্খলা সমস্যা। তার মানে উভয়পক্ষকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
১৭ ডিসেম্বর শীর্ষ সম্মেলনের সময়ও উভয় নেতা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে সীমান্তে নাগরিক প্রাণহানি উদ্বেগের বিষয় এবং সীমান্তরক্ষীদেরকে শূন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন শুরু গুয়াহাটিতে
নেতারা চলমান সমন্বিত সীমান্ত পরিচালনা পরিকল্পনার সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। উভয় পক্ষই অস্ত্র, মাদক ও জাল টাকা চোরাচালান এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাচার রোধে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোতে সন্তুষ্টির কথা জানান।
ভ্যাকসিন সহযোগিতা
নেইবারহুড ফার্স্ট পলিসির আওতায় ভারত আশ্বাস দিয়েছে যে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে সরবরাহ করা হবে।
দু'দেশ এই ক্ষেত্রে বেসরকারি সেক্টরে চুক্তিও করেছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘ভ্যাকসিনের জন্য আপনাদের নিজস্ব প্রক্রিয়া রয়েছে, আমি মনে করি চুক্তিটি ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে প্রতি মাসে কতগুলো ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।’
করোনার ভ্যাকসিন কিনতে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের সাথে সরকারের চুক্তি
দোরাইস্বামী বলেন, তারা সম্ভব হলে আরও বেশি কিছু করতে পেরে খুশি হবেন, কেবল ভ্যাকসিন সরবরাহ না করে উত্পাদন এবং সহযোগী উত্পাদন পর্যায়ে যাওয়ার জন্য তারা চিকিত্সা পরীক্ষা করতে প্রস্তুত।
ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা কেবল বাংলাদেশেরই রয়েছে বলে জানান হাইকমিশনার। ‘এগুলো আমরা একসাথে করতে পারি।’
রোহিঙ্গা সঙ্কট
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত যথেষ্ট কাজ করছে না এমন ধারণার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা জানি না যে আমাদের কাছ থেকৈ কি করার প্রত্যাশা করা হয় যখন আমরা সবাই একমত যে এই দুর্ভাগা লোকদের অবশ্যই তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে যেভাবে প্রভাবিত করে ভারতেও তার প্রভাব পড়তে পারে। সুতরাং, আমরা কেন এই সমস্যার সমাধান চাইবো না? আমরা আরও কি করতে পারি?
হাইকমিশনার বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আমরা মিয়ানমারের বেসামরিক এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিটি স্তরে কথা বলি, সেখানে আমাদের অবস্থানও স্পষ্ট।’
তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং বলেন যে তারা সমর্থন করে রোহিঙ্গাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এবং যত দ্রুত সম্ভব ফিরে যেতে হবে। শুধু ফিরে যাওয়া নয়, তাদের অবশ্যই সেখানে তাদের নিজের দেশে থাকতে হবে।
রোহিঙ্গা স্থানান্তরকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করতে ঢাকার আহ্বান
দোরাইস্বামী বলেন, তারা যা করছে না তা হলো তারা সরাসরি আলোচনায় হস্তক্ষেপ করছে না। ‘আমরা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার উভয়েরই বন্ধু।’
সাম্প্রতিক ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনের সময় উভয় প্রধানমন্ত্রী তাদের নিরাপদ, দ্রুত এবং স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের গুরুত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ মানুষকে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নির্বাচনের জন্য ভারতকে অভিনন্দন জানান। তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার কথা বলেন।
অংশীদারিত্ব উদযাপন
কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশ ও ভারত প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে সম্মেলন করার বিষয়ে আলোচনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সালের মার্চ মাসে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা একে অপরের সাথে যা ভাগ করে নিতে পারি, অন্য কোনো দেশ তা করতে পারে না। সুতরাং, এটি আমাদের প্রচেষ্টা।’